Header Ads Widget

Responsive Advertisement

আপনার ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ড কোথাও গোপনে সিসি ক্যামেরা দ্বারা রেকর্ড হচ্ছে না তো?

কিছু ওয়েব-সাইট আর ফেইসবুকের কল্যাণে লাখো মানুষের কাছে একটা তথ্য পৌঁছে গেছে যে সেল ফোন ব্যবহার করে গোপন ক্যামেরা সনাক্ত করা সম্ভব। ঐখানে যেভাবে সনাক্তকরণের কথা বলা হয়েছে সেটা টেলিকম এ পড়াশোনা করা একজন হিসেবে আমাকে বেশ ভাবালো। সেই থেকে আমি, আমার বন্ধু পার্থ আর আবরার মিলে এই লেখাটা দাঁড় করালাম। আশাকরি অনেকের কাজে লাগবে।

ঐ লেখাগুলোতে দেখানো হচ্ছে যে আরএফ ফ্রিকোয়েন্সি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তারবিহীন ক্যামেরা্র কারণে সেলফোন থেকে ফোন করা যায় না।

ব্যবহৃত তারবিহীন গোপন ক্যামেরাগুলোর অধিকাংশতেই ক্ষেত্রেই ২.৪-২.৫ গিগা হার্জের আর এফ সিগনাল ব্যবহার করা হয় যা সাধারণ সেলফোনের মাধ্যমে সনাক্ত করা সম্ভব হবার কথা না।

বাংলাদেশে (এবং বিশ্বের অধিকাংশ দেশে) প্রচলিত সেলফোনগুলো GSM-900 এবং GSM-1800 ব্যবহৃত হয়। GSM-900 এর ক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডঃ সেলফোন থেকে বেইজ-স্টেশনে পাঠাতে ৮৯০-৯১৫ মেগা হার্জ আর বেইজ-স্টেশন থেকে সেলফোনে ডাটা গ্রহণ করার সময় ৯৩৫-৯১৫ মেগা হার্জ। অন্যদিকে GSM-1800 এর ক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডঃ সেলফোন থেকে বেইজ-স্টেশনে পাঠাতে ১৭১০-১৭৮৫ মেগা হার্জ আর বেইজ-স্টেশন থেকে সেলফোনে ডাটা গ্রহণ করার সময় ১৮০৫-১৮৮০ মেগা হার্জ।

ফলে গোপন ক্যামেরার ফ্রিকোন্সির জন্য সেলফোনের ফ্রিকোয়েন্সি ব্লক হয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, খুব একটা ইন্টারফেয়ারেন্সেরও সুযোগ নেই। তাই ঐভাবে সেলফোন দিয়ে আরএফ ফ্রিকোয়েন্সি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত গোপন ক্যামেরা সনাক্ত করা সম্ভব না।

এভাবে যেখানে সেখানে গোপন ক্যামেরাগুলো কেন বসানো হয়?? কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা রক্ষার্থে এভাবে নজরদারি করা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে খারাপ উদ্দেশ্যে। তাই এগুলো বসানো হয়ে থাকে মেয়েদের বাথরুমে, ট্রায়াল রুমে, হোটেল, এমনকি কখনো কখনো লোকজনের বাসাতেও। মূল উদ্দেশ্য মেয়েদের শরীর আর নারী-পুরুষের অন্তরঙ্গ দৃশ্যগুলো ধারণকরা, সেগুলো নিয়ে কাউকে হেয় করা, ব্যবসা করা।

গুগলে ‘victim by hidden camera’ লিখে খোঁজ করলে তৎক্ষণাৎ পাওয়া যাবে ৩৬ লাখ ওয়েব-সাইট লিঙ্ক, ৩৬৪ টি ভিডিও এর লিঙ্ক। আর ‘hidden camera in girls toilet’ লিখে খোঁজ করলে পাওয়া যাবে ৩৭ লাখ ৪০ হাজার ওয়েব-সাইট লিঙ্ক, ২৫৪ টি ভিডিও এর লিঙ্ক। এর থেকেই গোপন ক্যামেরার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।

 

অনেক ধরণের ক্যামেরা আছে যা এসব কাজে ব্যবহৃত হয়। আগেকার দিনের ক্যামেরাগুলোর আকার বড় ছিল বলে অনেক সহজেই তা ধরা যেত। কিন্তু আজকাল ইলেকট্রনিক্স এর বিপ্লবে এদের আকার এত ছোট হয়ে গেছে যে সহজেই সনাক্ত করা সম্ভব না। তার উপর এখনকার এই ক্যামেরাগুলো সাধারণত তারবিহীন হয়ে থাকে এবং আকার এত বেশি ছোট হয় যে অনেকসময় খালি চোখে এদের অস্তিত্ত্ব নির্ণয় করা অসম্ভব।

ছবি – অতিক্ষুদ্র ক্যামেরা যা চোখে পরা খুব কঠিন

এবার একটু জেনে নিই যে কীভাবে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন আর এর থেকে প্রতিকারে উপায়ই বা কী –

১) অনেক সময় বিশেষ কারো প্রতি নজর রাখতে কারো বাসাতেই গোপন ক্যামেরা বসাতে পারে। সাংবাদিকেরা সেলিব্রেটিদের বাসায় এই কাজ করতে পারে, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কাউকে হেয় করতেও এই কাজ করতে পারে। আবার অনেক সময় সন্দিহান স্বামী/স্ত্রী বাসাতে বসে তার স্ত্রী/স্বামী কী করছে তা জানার জন্যো করে থাকতে পারে।

এ কাজের জন্য ক্যামেরা বাসার যেকোন জায়গাতেই বসানো হতে পারে। তাই সোফার কোণা, ঘড়ি, টেলিভিশন, ফ্যান এর মতন জায়গাও সন্দেহের বাইরে না। এসব জায়গাতে চোখে পরার মতন কালো দাগ দেখলেই তা পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।

বাসার সব কিছু ঠিক জায়গাতে আছে কিনা কিংবা নতুন কিছু দেখা যাচ্ছে কিনা তাও দেখে নেওয়া উচিত। অনেকে অভিনন্দন জানাতে ফুলের বুকির মাঝেও ছোট্ট একটা ক্যামেরা লুকিয়ে রাখতে পারে। তাই সাবধান!!

ঘরের বাতি নিভেয়ে এলইডি থেকে নির্গত হয় এমন ক্ষুদ্র লাল সবুজ আলো খুঁজে দেখা উচিত। বেশিরভাগ ক্যামেরার মাইক্রফোনের পাওয়ার অন করার পরপরই পাওয়ার অন ইনডিকেটর বাতি জ্বলে ওঠে। অনেকে ক্যামেরা স্থাপন করার সময় এই ফিচার বন্ধ করতে ভুলে যায়। এতে সহজে অন্ধকার জায়গায় ক্যামেরা সনাক্ত করা যায়। সাথে রুমে থাকা আয়না এবং জানালার কাঁচ গুলো ফ্ল্যাশ লাইট দিয়ে চেক করে নেয়া উচিত। সম্ভব হলে কিছু দিয়ে স্বচ্ছ কাঁচ ঢেকে দেয়া উচিত।

অনেক ক্যামেরা আছে মোশন সেন্সিটিভ। যখন ক্যামেরা ভিডিও ধারণ করে তখন এর থেকে হালকা শব্দ নির্গত হয়। তাই সতর্কতার সাথে খেয়াল করে দেখা দরকার যে কোন শব্দ পাওয়া যাচ্ছে কীনা।

২) গেষ্ট হাউস বা আবাসিক হোটেলে ওঠার আগে যদি সম্ভব হয় সাথে একটি আরএফ সিগনাল ডিটেক্টর (RF signal detector) বা ক্যামেরা ডিটেক্টর সাথে কিনে রাখতে পারেন। এটি আকারে ছোট বহন করতে সুবিধা এবং খুব বেশি দামিও না। আরএফ সিগনাল ডিটেক্টর দিয়ে সম্পূর্ণ সার্চ করা যায় এবং কোন ধরনের বিশেষ সিগনাল সনাক্ত হলেই ডিটেক্টর সিগনাল দিয়ে সতর্ক করে দিবে।

কিছু কিছু হোটেলে ডুয়েল মিরর বসানো থাকে। ডুয়েল মিররের উল্টো পাশ থেকে আয়নার এপাশের সব কিছুই পরিষ্কার দেখায় যায় সাধারণ কাঁচের মতো। কিন্তু এপাশ থেকে দেখলে এটাকে একটা সাধারণ আয়না ছাড়া কিছুই মনে হবে না। অনেক গেস্ট হাউসে এই ডুয়েল মিররের উল্টোপাশে ক্যামেরা বসিয়ে কাপলদের ক্লিপ রেকর্ড করা হয়। তাই হোটলে বা গেষ্ট হাউসে থাকা আয়নাগুলো সঠিকভাবে চেক করে নেয়া উচিত।

আয়নার উপর একটা আঙ্গুল রাখুন। আপনার আঙ্গুল আর আয়নায় আঙ্গুলের প্রতিবিম্বের মাঝখানে যদি কোনো ফাঁক না থাকে (মানে দুটো আঙ্গুলের মাথা যদি একেবারে একটার সাথে আরেকটা লেগে থাকে) তাহলে বুঝবেন এটা ডুয়েল মিরর। আর যদি মূল আঙ্গুল এবং আয়নার আঙ্গুলের মাঝে একটু ফাঁক থাকে (মূলত আয়নার থিকনেসের সমান) তাহলে বুঝবেন এটা একটা সাধারণ আয়না।

৩) মহিলারা যারা জিমে যান তাদেরকে জিমের ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় এবং ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহারের আগে সঠিকভাবে চেক করে নেয়া উচিত। আশেপাশে পরে থাকা জিম ব্যাগগুলো চেক করে নিলে ভাল হয়। কারন আজকাল জিম ব্যাগ নামক হিডেন ক্যামেরা বাজারে এসেছে। এতে অতি ক্ষুদ্র ক্যামেরা লাগানো থাকে।

তাছাড়া মেয়েরা যখন কাপড় কিনতে গিয়ে ট্রায়াল রুমে কাপড় বদলে দেখেন কিংবা বাইরের কোথাও অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের টয়লেটে যান তখন সে জায়গাটি খুব ভালো করে দেখে নেওয়া প্রয়োজন। চারদিকে চোখে লাগার মতন কিছু দেখা যায় কিনা, কোন ছোট কালো কিছু দেখা যায় কিনা। সাথে কাপড় বদলের পূর্বে ট্রায়াল রুমের আয়নাটিও পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন।

ছবি – ট্রায়াল রুমে মেয়েদের শরীর ধারণের অপকৌশল

৪) বর্তমান টিনেজারদের মাঝে সাইবার ক্যাফেতে বসে মেইক-আউট করার প্রবণতাও দেখা যায়। অনেক সাইবার ক্যাফের লোকেরা সেখানে গোপন ক্যামেরা বসিয়ে রাখেন এবং অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো ধারণ করে ওয়েব-সাইটে ছেড়ে দেয় কিংবা ব্যাক্মেইলিং এর কি হিসেবে ব্যবহার করে। তাই টিনেজারদের এই ব্যাপারে খুবই সচেতন থাকা উচিত।

বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি এতটা এতটা এগিয়ে যাচ্ছে যে ক্যামেরাগুলো দিনকে দিন সনাক্ত করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। তাই সকলেরই উচিত সাবধানে থাকা। পার্ক কিংবা রেস্টুরেন্টে নিজেদের সংযত রাখা এবং নিজের পোষাক ঠিক আছে কিনা সেইদিকে খেয়াল রাখা। অপরিচিত কাউকে ছবি তুলতে দেওয়া উচিত না। ফেইসবুকে নিজের ছবি গুলো সঠিকভাবে প্রাইভেসি দিয়ে সংরক্ষণ করা উচিত।

গোপন ক্যমেরার মাধ্যমে কারো উপর নজর রাখা দণ্ডনীয় অপরাধ। পশ্চিমা দেশগুলো এসব ব্যাপারে অনেক সচেতন হলেও আমাদের মতন দেশে আইন থাকলেও সে আইনের কোন প্রকার প্রয়োগ নেই। তাই নিজের সম্মান বাঁচাতে নিজেকেই যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

Post a Comment

0 Comments